Tuesday, April 26, 2011

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও ভারতের জাতিরজনক, অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মুখে ঠাকুরের কথা শুনে আকৃষ্ট হন মহাত্মা গান্ধী। দেশবন্ধুর মতো ক্ষণজন্মা মহান নেতা যাঁকে ইষ্ট পদে বরণ করেছেন তাঁকে স্বচক্ষে দেখার বড় কৌতুহল ছিল মহাত্মাজীর।১৯২৫ সালের ২৩শে মে তিনি পাবনা আশ্রমে এলেন। মহাত্মাজী যখন আশ্রমে এলেন তখন জনারণ্যে আশ্রমপ্রাঙ্গণ ভরে গেল। তিনি ঠাকুর জননী মনোমোহিনী ও সৎসঙ্গের কর্মীবৃন্দের সঙ্গে আশ্রমের বিভিন্ন স্থান ঘুরলেন। আশ্রমের কুটীর, শিল্পাগার, বিজ্ঞানকেন্দ্র, তপোবন বিদ্যালয় কারখানা, তড়িৎভবন, কলাভবন ঘুরে ঘুরে সবই দেখলেন।
মহাত্মাজীর গলা জড়িয়ে ধরে মাতা মনোমোহিনী দেবী বললেন - "তুমি জগতের কাছে মহাত্মা হতে পার, আমার কাছে তুমি ছেলে, আমি ছেলে হিসাবেই তোমাকে দেখি"।
সুশীলদা মহাত্মাজীকে মায়ের কথা বুঝিয়ে বললেন তিনি খুশী হয়ে খুব হাসলেন। মা নিজ হাতে মহাত্মাজীর জন্য ফলমূলাদি ও অন্যান্য খাবার দিয়ে দিলেন। স্বশ্রদ্ধায় ও সানন্দে মহাত্মাজী তা গ্রহণ করে সঙ্গে নিলেন।
মহাত্মাজী জননী মনোমোহিনী দেবীর স্নেহল মাতৃত্ব এবং মহীয়সী ব্যক্তিত্বে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলেন। ভারতের বিভিন্ন স্থানে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঠাকুর ও সৎসঙ্গ বিষয়ে আলোচনাকালে তিনি মায়ের খুব প্রশংসা করেন। মা সম্পর্কে তাঁর অবিষ্মরনীয় উক্তি - 'I have never seen such a masterful woman of such wonderful personality in my life' (এমন বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্ব-সম্পন্না মহীয়সী নারী জীবনে আমি কখনও দেখি নাই।)
undefinedবস্তুত দেশবন্ধুর মাধ্যমেই ঠাকুর সম্পর্কে গভীর বিষ্ময় জন্ম নিয়েছিল মহাত্মাজীর মনে। দেশ-জাতি সমাজ গড়তে হলে ধর্মই যে একমাত্র পথ দেশবন্ধুর মনে এই গভীর বিশ্বাস দেখে তিনি খুবই বিস্মিত হন। এরপর ঠাকুরের সঙ্গে মহাত্মাজীর সাক্ষাৎ হয় কলকাতায়। ঠাকুর অসুস্থ শুনে তিনি দেখতে আসেন তাঁকে। কথা প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে মহাত্মাজী বললেন - "আপনার আশ্রম থেকে ফিরে আসার পর একদল লোক এসে আপনার খুব নিন্দা করল, আবার একদল লোক খুব প্রশংসা করল। অথচ উভয় দলেই বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ রয়েছেন"।
ঠাকুর একথা শুনে বললেন - "প্রশংসার কথাতো জানিনা। তবে নিন্দা যদি কিছু শুনে থাকেন তবে ভরসা হয় পরমপিতার কাজ তাহলে একটু আধটু শুরু হয়েছে"। ঠাকুরের কথায় মহাত্মাজী মুগ্ধ হয়ে হাসতে লাগলেন। শেষে বললেন “আপনার সংস্পর্শে এসে দেশবন্ধুর যে অদ্ভুত মানসিক পরিবর্ত্তন সাধিত হয়েছে তা দার্জিলিং এ তাঁর সাথে আলাপ করে বুঝতে পেরেছি”।
ঠাকুরকে ধরে দেশবন্ধুর রাজনৈতিক সত্ত্বা যেভাবে আধ্যাত্মিক দিকে বাঁক নিয়েছিল দেশবন্ধুর সেই বিষ্ময়কর নবজীবনের কথা মহাত্মাজী বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন।২৮/৬/১৯২৫'নবজীবন' পত্রিকায় বলেন “দার্জিলিং-এ তাঁর কাছে যখন যাই, তখন তিনি বাড়ীতে মাছ-মাংস ঢুকতে দিতেন না। তিনি আমাকে বার-কয়েকই বলেছিলেন,-'পারলে আর কখনও মাছ-মাংস খাবনা, আমার খেতে ভাল লাগে না, আর তাতে আধ্যাত্মিক বিকাশেও বাধা ঘটে। আমার গুরুদেব বিশেষভাবে বলেছেন - আমি এখন যে সাধনার পথ ধরেছি তাতে আমার পক্ষে আমিষ বর্জন করাই বিধেয়।'
লেখক: রিন্টু কুমার চৌধুরী
পরিচালক, শ্রেয় অন্বেষা
(শ্রীশ্রীঠাকুরের আদর্শবিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিষ্টান)

undefined

No comments:

Post a Comment